আসমানিদের কথা

ক্ষুধা (সেপ্টেম্বর ২০১১)

এস,এম, মোস্তফা আব্দুল্লাহ
  • ৩০
  • 0
  • ১২০
ডাক্তার আসিবার পূর্বেই রোগীটি মারা গেলো।এর ইংরেজি কি হবে? কত মার খেয়েছি এটা শেখার জন্য কিন্তু এখন কিছুতেই মনে করতে পারছি না। প্রচণ্ড গরমে আমারও প্রায় রোগীটির মত অবস্থা। ট্রেন আসার আগে আমিও বোধহয় মারা না গেলেও অন্তত আধমরা হবো। রেলওয়ের প্লাটফর্মে দাড়িয়ে এসব সাত পাঁচ ভাবছি। বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন বরাবরের মত দেরিতে আসবে,কিন্তু দেরি বোলতে কতক্ষণ টা কেউ জানেনা।রমজানের ছুটিতে ভার্সিটির বাসায় ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা।
হঠাৎ মিষ্টি এক কণ্ঠস্বর কানে এল,”ভাইয়া কিছু দিবেন?”
বিরক্তি তখন সীমা অতিক্রম করেছে শক্ত কিছু একটা বলতে গিয়েও মায়াবী চেহারা দেখে থমকে গেলাম। আট বা নয় বছরের একটা ছোট মেয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে রয়েছে। বর্তমানে বাচ্চাদের দিয়ে ভিক্ষা করানো লাভজনক ব্যাবসা,পত্রিকার গরম গরম খবর আমার আবেগ কেড়ে নিল। নিজের আবেগকে সামলে নিয়ে বল্লাম,”তোর আর আমার অবস্থা একি ,পারলে আমারে কিছু টাকা দিয়া সাহায্য কর।”
আমাকে অবাক করে মেয়েটা তার হাত থেকে পাঁচ টাকার একটা নোট দিয়ে বলল,”ভাইয়া নেন।“
লজ্জাজনক পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে মরিয়া হয়ে মানিব্যাগ হাতরে দশ টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিলাম।মেয়েটি আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল “ভাইয়া আপনার কাছেত টাকা নাই আপনে নেন,আমি আর কিছু দেই।“
ইঁচড়েপাকা মেয়ের কথা শুনে মাথা গরম হয়ে গেলো। একটা কষে চড় দিলাম ।
মেয়েটার মায়াবী চোখের পানি আমাকে জানিয়ে দিল যে আমি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। নিজের পাপ মোচনের জন্য কি করা যায় ভাবছি, আশেপাশের লোকজন একপলক তাকিয়ে নিজেদের কাজে মন দিলো।
কি আর করা,পাশের দোকান থেকে বিস্কুট কিনে এনে নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা করলাম । মেয়েটি না নিতে চাইলেও তাকে জোর করে দিলাম। প্লাটফর্মের বেঞ্চে বসে প্যাকেট খুলে খেতে বল্লাম।
-তোর নাম কিরে?, চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল
প্রশ্নের সাথে সাথে উত্তর,”আসমানি।”
চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল।
-থাকিস কই?
-অই পিছনের বস্তিতে,আঙ্গুল টা দুরের কিছু পলিথিনের ঘরের দিকে।
-বাবা কি করে তোর?”
-আরেকটা বিয়া কইরা আমার মা রে ফালাই থুইয়া গেছেগা।
-মা আছে?
-হ্যাঁয় বাজানের দুককে গলায় দরি দিছে।
নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে মেয়েটি কি একা ?,মনের অজান্তে জিজ্ঞেস করলাম,
- থাক কার কাছে?
-নানির ধারে।
-নানি কি করে?
-না হ্যাঁয় ত বুড়া,কাম করতে পারে না।
-চলে কিভাবে?
-আমি ভিক্কা করি হ্যাঁতে যা হয় ,পাইলে খাই না পাইলে খাইনা।
-খিদা লাগে না,টাকা না থাকলে কি করো?
-কি আর করমু হুইয়া থাকি।
-ভিক্ষা করো, পড়ালেখা করো না?
-পরলে কি আমনে খাওয়াইবেন ?
বিবেকের দুয়ারে আঘাত লাগলো । সরকারের পথশিশু প্রকল্পের সফলতা দেখলাম।
বললাম,” চল আমার সাথে আমাদের বাসায় থাকবি,খাবি,আর পরালেখা করবি।“
-না না ।
অবাক হয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করলাম।
-আমি ঘুমামু আর আমনে বা আর কেউ আমার গায়ে হাত দেবেন।
পুরুষ হিসেবে ধিক্কার দিতে ইচ্ছা হল নিজেকে।
-কি বলিস তুই?
-হয়,আগে এক বাড়ী কামে গেসিলাম,তিন বেলা খাওন দেওনের আর থাকন পরনের কথা ছিল।দুই দিন পর মালিকের ছোডো পুলা চকলেট দিতে গিয়া আমার গায়ে হাত দিবার চাইলো পরে আবার হের বাপে আমারে ঘুমনের সময় রাইতে গায়ে হাত দিবের চাইলো। কাম ফালাইয়া ,পলাই আইলাম।
স্তব্ধ হয়ে গেলাম ।নিজের কানে কি শুনলাম? এই বাচ্চাটার সাথেও? পশুও বোধয় এমন হয়না। নিজেকে পুরুষ কিংবা এই সমাজের সভ্য নাগরিক শ্রেণীর মানুষ ভাবতেই খারাপ লাগলো।
একটু স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম ,”এখানে কেমন করে থাকো?”
-এইখানে খারাপ না ,লোকজন থাকে ,চিল্লানি দিলে লোকজন আহে। মাঝে মাঝে যদি কেউ খাওনের লোভ দেখাইয়া কাছে ডাহে , তহন গাইল পারি।মুই অখন চালাক ,কেউ ডাকলেই যাই না।খিদা প্যাডে থাকলেও চাপাই রাহি ।
বিস্ময়ের ধাক্কা সামলাতে সময় লাগলো না। মানুষ বারবার বিস্মিত হয় না।
-চল আমার সাথে, আমি ওরকম না। আমার নিজেরও দুই বোন আছে, তুই ওদের সাথে থাকবি আর পড়ালেখা করবি।
-না ভাইজান।
-কেন?
-আমার দুই বছরের ছোটো বুন আছে ওরে দ্যাখ বো কেডা? আমার মতো ওয়ো কি ভিক্ষা করবো, আমি ওরে ঠিক মতন খাওন পড়ন দিমু। কাম করতে দিমু না, ভিক্ষা করতেও দিমু না।
-বড় হয়ে কি করবা?
-কি আর করুম, বড় হৈলেতো আরো জ্বালা।কত বেশী ঝামেলা ঐবো।না ভীক্কা করতে পারুম না লোকের বাড়িত কাম করতে পারুম। জানোয়ার গুলা আমার পিষণে ওহনি লাগে তহন তো আরও বেশী লাগবো।
এতটুকু বাচ্চা মেয়ে ,যার সাথে আমাদের সমাজের কিছু অসভ্য পশুর নোংরা আচরণ তাকে এই বয়সে নিজেকে নিয়ে,নিজের ছোটো বোনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে বাধ্য করলো,যখন কিনা তার পুতুল নিয়ে খেলার কথা,আমিও তো সেই সব পশুদের দলভুক্ত। ক্ষুধা তাকে কি নিষ্ঠুর পৃথিবীর সাথে মর্মান্তিক ভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কি আমাদের কিছুই করার নেই।

ট্রেন প্লাটফর্মে ঢোকার শব্দ শুনলাম ।আসমানিও শব্দ শুনে বিস্কিট ফেলে রেখে ট্রেন এর দিকে দৌড় দিল। আমিও আমার জিনিস পত্র নিয়ে ট্রেন এর দিকে ছুটলাম । কষ্ট করে একটা সিট দখল করে বসলাম। পরে রইলো আসমানি ও তার কথা।

রমজান মাস চলছে। মহান আল্লাহতালা আমদের রোজা রাখার নির্দেশ দিছেন যাতে আমরা ক্ষুধার্তের কষ্ট অনুভব করি। অনুভব করি, আসমানিদের কষ্ট। তাদের পেটের ক্ষুধার সুযোগ নিয়ে আমরা যেন আমাদের শরীরের ক্ষুধা না মিটাতে চাই।
মহান রমজান মাসে ক্ষুধার্তের জ্বালা অনুধাবন করে নিজেদের শুধরে নেই।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নিরব নিশাচর ......................... লেখাটা আরো দশবার পরে জঔঅর মত আবেদন রাখে... আপনার ব্লগের মন্তব্যের সংখ্যা দেখে আমি অবাক... এই লেখা নির্দিধায় আরো অনেক মন্তব্য ও সন্মান পাওয়ার যোগ্য... নেটওয়ার্কে যারা আমার মন্তব্যটা পড়ছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ যে এই লেখাটা একবার পড়ে যান...
সূর্য N/A শেষ প্যারাটা না দিলে গল্পটার আবেদন সুন্দর হতো। এমনিতেও ঢের ভালো হয়েছে। ব্রাভো...........
M.A.HALIM একবারেই দারুণ বললাম। খুব খুব ভালো লাগলো, একেবারে শতভাগ বাস্তব চিত্র। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
F.I. JEWEL N/A # আসমানী আর তাদের জীবন যুদ্ধের করুন কাহিনীর অতীব সুন্দর গল্প ।।
ইয়াসির আরাফাত আসমানী নামটি পুরনো হলেও আপনার লেখায় নতুন্তত আছে । আপনার উপলব্ধি দারুন .........
ঝরা ভাইয়া কিছু মনে করবেননা আসলে পুরুষ মানুষদের উপর থেকে বিশ্বাস অনেক আগেই উঠে গেছে।তবে ভাবতাম সবাই এমন নয়।কিন্তু যাকেই শুদ্ধ ভাবি পরিশেষে তার রুপটিও একইভাবে খুলে যায়।এমনকি যারা আপনার লিখার মত করে বলে যে কিছু কিছু পশু কেন এমন তারাও কিন্তু কম নয়। আপনার লিখাটা যদি কিছু শিখায় তবেই আপনি স্বার্থক।
তৌহিদ উল্লাহ শাকিল N/A এই সমাজে সব বদলে গেলে ও আসমানীরা বদলায়না . বদলাতে পারেনা . শুভকামনা রইলো .
Ishtiaq Ahmed বেশ ভালো লাগলো। সমাজের সঠিক রুপটা এই লেখায় ফুটে উঠেছে। আমরা কবে মানুষ হবো?
বিষণ্ন সুমন আসমানীরা আসলে আমাদের ঘুনে ধরা সমাজের প্রতি বিবেকের অঙ্গুলি, যা আমরা দেখেও না দেখার ভান করি । এর পরেও নাকি আমরা সৃষ্টির শ্রেষ্ট জাত, আশরাফুল মাখলুকাত (মানুষ) । মানুষ তো বটেই, তবে শুধুই অমানুষ।

০১ আগষ্ট - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“অক্টোবর ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ অক্টোবর, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী